কেন এতো অবক্ষয়
কেন এতো অবক্ষয়
-মোঃ মনির হোসেন
স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে আমাদের সব ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। ব্যক্তি পর্যায়,সামাজিক পর্যায়, রাজনীতি, অর্থনীতি, যাতায়াত, যোগাযোগ সব ক্ষেত্রেই অগ্রগতি হয়েছে চোখে পড়ার মতো।কিন্তু এই উন্নয়নের জোয়ারে আমরা যা হারাতে বসেছি তা কখনো পূরণ হবার নয়।টাকা বা সম্পদের চেয়ে মূল্যবান যে সম্পদ তা হলো ব্যক্তির মান-মর্যাদা ও মূল্যবোধ। এই মূ্ল্যবোধে এখন চির ধরেছে সমাজের পরতে পরতে।এখন আর সমাজের ছোটরা আগের মতো বড়দের সম্মান করে না,বড়রাও ছোটদের স্নেহের চোখে দেখে না।নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশায় কেউ কাউকে শাসন করে না,করলেও হিতে বিপরীত হয়।ইন্টারনেট তথা-ফেসবুক,ইউটিউব,টিকটক ইত্যাদি এবং মদ,গাজা,ইয়াবায় আসক্ত সমাজের যুবক-যুবতীরা। শিশু -কিশোররা পড়াশুনা ছেড়ে ডুবে থাকে গেমস খেলায়।এভাবে সমাজের সর্বস্তরে অবক্ষয় শিকড় গেড়ে বসেছে।কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে হাজার বছর ধরে আমারা যে মূল্যবোধ ও মর্যাদা অর্জন করেছি বিগত চল্লিশ-পঞ্চাশ বছরে তার এতো অবক্ষয় হলো কেন?কি কি কারণ এর জন্য দায়ী??সমাজ বিশ্লেষকগণ এই অবক্ষয়কে নানা দিক থেকে ব্যাখ্যা করে থাকেন। কেউ বলেন,অবাধে ইন্টারনেট ব্যবহার এর জন্য দায়ী,কেউ বলেন,মাদকের প্রসার,আবার কেউ বলেন, অপরাজনীতির ব্যবহার ইত্যাদি।আমার কাছে এর প্রধান কারণগুলো যা মনে হয় তা হলোঃ ১.অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ২.পারিবারিক সুশিক্ষার অভাব,৩.ইন্টারনেটের অবাধ ব্যবহার (যেমন-ফেসবুক, ইউটিউব, গেমস,টিকটক ইত্যাদি),৪.নির্যাতনের সহজলভ্যতা,৫.রাজনীতি বা পেশীশক্তির প্রভাব, ৬.অনুকরণীয় নেতৃত্ব ও ব্যক্তিত্বের অভাব এবং ৭.নৈতিকতা শিক্ষার অভাব।আসলে সমাজের অবক্ষয় হলো নদীর ভাঙ্গনের মতো।নদীতে ভাঙ্গন শুরু হলে যেমন শত চেষ্টা করেও ঠেকানো যায় না, তেমনি সামাজিক অবক্ষয়ও একটি দুটি কারণে হয় না।উপর্যুক্ত বিষয়গুলোকে আমি প্রধান কারণ বলেছিমাত্র।এছাড়াও আরো অনেক কারণ রয়েছে এমন অবক্ষয়ের পিছনে।যাই হোক এবার আমার বক্তব্যের সপক্ষে একটু বিশ্লেষণে আসা যাক। যে অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য আমরা দীর্ঘ সংগ্রাম করেছি সে অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্যই আমাদের সামাজিক অবক্ষয় ডেকে আনছে। কারণ অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য মানুষকে ভোগবাদী করে তোলে।কেউ যখন অঢেল অর্থ বা সম্পদের মালিক হয় তখন সে বা তার উত্তরাধিকারীরা অর্থের অপব্যবহার শুরু করে।তারা টাকার বিনিময়ে যা ইচ্ছে তাই করতে চায়।যার উদাহরণ সিনে জগতের নায়িকা বা মডেলরা কিংবা দূর্ণীতির মাধ্যমে সৃষ্ট নব্য ধনীরা।এসব পরিবারের কর্তাব্যক্তিরা যখন টাকা আর ক্ষমতার পিছনে দিন-রাত ছুটে বেড়ায় তখন তাদের সন্তানদের পারিবারিক সুশিক্ষায় শিক্ষা দিতে পারে না।এছাড়া সেসব সন্তানরা তাদের বাবা মাকে প্রয়োজনে নিজেদের পাশে পায় না বলে তারা ডুবে থাকেএন্ড্রয়েড ফোন বা এন্ড্রয়েড ফোনর জগতে।এভাবে তারা ইন্টারনেটে আসক্ত হয়ে নানা অপরাধের পথে পা বাড়ায় বা জড়িয়ে পড়ে।এ জগতের নতুন একটি সংস্করণ হলো এন্ড্রয়েড ফোন।এটি এমন এক যন্ত্র যার আসক্তি থেকে বেড়িয়ে আসা কোন কিশোর -কিশোরী বা যুবক-যুবতিদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। তবে বলা প্রয়োজন, ইন্টারনেট মানেই খারাপ কিছু নয়।ডিজিটাল দুনিয়ায় ইন্টারনেট আমাদের অনেক কিছু দিয়েছে যা কল্পনাতীত। তবে এর অপব্যবহারই আমাদের সমাজের অবক্ষয়ের কারণ। কেননা, এটি ব্যবহারের ভালোমন্দ না শিখতেই আমরা শিশু -কিশোরের হাতে তা তুলে দিচ্ছি। এদিকে যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নের কারণে সমাজে মাদক এখন অতি সহজলভ্য বস্তু। ইন্টারনেট কানেকশন এটাকে আরো সহজ করে দিয়েছে। মাদকের অবাধ ব্যবহার ও আসক্তি আমাদের সমাজকে কতোটা অবক্ষয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে তা গ্রাম,উপশহর বা শহরের পাড়া-মহল্লায় দৃষ্টি রাখলেই চোখে পড়ে।মাদকাসক্ত হয়ে চুরি-ডাকাতি, খুন, ধর্ষণ,মা-বাবাকে নির্যাতনের ঘটনা প্রতিনিয়তই আমাদের নজরে আসে।আর রাজনৈতিক পেশীশক্তি আমাদের সমাজকে কীভাবে দলিতমথিত করছে তা আশাকরি কারোরই অজানা নয়।কোন একটি দল ক্ষমতায় থাকলে তার কর্মী-সমর্থকদের দাপটে সমাজের সাধারণ মানুষ তটস্থ থাকে।অথচ জনসেবার কমিটমেন্ট নিয়েই তারা রাজনীতির পাঠ নেয়।এছাড়া আমাদের রাজনীতি ও শিক্ষাক্ষেত্রে এখন অনুকরণীয় নেতৃত্ব ও ব্যক্তিত্বের বড়ই অভাব।নতুনরা সেই আদর্শিক বা অনুকরণীয় মানুষ না পেয়ে প্রতিনিয়ত বিপদগামী হচ্ছে।আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেও তরুণ-তরুণীরা নৈতিকতার শিক্ষা তেমনটা পায় না।আগে যেমন শিক্ষকগণ স্বেচ্ছায় ছাত্রদের অনুশাসন করতে এগিয়ে আসতেন এখন আর তারা তা করতে চান না।তারও অবশ্য নানা কারণ আছে।যাই হোক,আশাকরি আমি আমার বলা কারণগুলো কিছুটা বিশ্লেষণ করে সেগুলো কীভাবে সামাজিক অবক্ষয় ডেকে আনছে তা বুঝাতে পেরেছি।আর এই অবক্ষয় রোধ বা দূরীকরণ কোন সহজ বিষয় নয়।এটা প্রতিরোধ করতে আগে দরকার এর উৎসগুলোর মুখ বন্ধ করা।আরো প্রয়োজন একটি গণআন্দোলন ও জাতীয় সিদ্ধান্ত।বলিষ্ঠ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তই পারে এই অবক্ষয় থেকে আমাদের সমাজ ও দেশকে রক্ষা করতে।