নতুন কারিকুলাম তৈরিতে গোঁজামিলের আভিযোগ
শিক্ষামন্ত্রী ২০২৩ সাল থেকে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের ঘোসনা করলেও এখনো চুড়ান্ত হয় নি পাঠ্যবইয়ের কনটেন্ট। ‘যোগ্যতাভিত্তিক শিখনফল’ বাদ দিয়ে ‘অভিজ্ঞতাভিত্তিক’ জটিল একটি যোগ্যতার ছক (মেট্রিক্স) জুড়ে দেওয়া হয়েছে শিক্ষাক্রমে। ওই শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থী কতটা শিখবে সেটার মাপকাঠিও নির্ধারিত হয় নি। মূল্যায়ন স্ট্যান্ডার্ডও অনির্ধারিত। এভাবেই গোঁজামিল দিয়ে সব চূড়ান্ত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
২০২৩ সাল থেকে শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরুর লক্ষ্যে ২০২২ সালে পাইলটিং করা হবে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের জন্য ২০০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাইলটিং করার কথা থাকলেও শেষ সময়ে মাত্র ৬০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া পাইলটিংয়ের জন্য বই প্রস্তুত না করায় চার মাস পর পর লার্নিং ম্যাটেরিয়াল দিয়ে ১২ মাস পাইলটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যা শুরু হচ্ছে ফেব্রুয়ারি থেকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০২৫ সালে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। প্রথম বছর ২০২৩ সালে প্রাথমিকের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে নতুন বই। এ লক্ষ্যে ২০২২ শিক্ষাবর্ষে পাইলটিং হবে প্রাথমিক স্তরের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির। ২০১২ সালে প্রণীত শিক্ষাক্রম চলছে এখন। প্রাথমিকের প্রথম শ্রেণির শিক্ষাক্রম নবায়ন করা হচ্ছে। অন্য শ্রেণির শিক্ষাক্রম পরিমার্জন করা হচ্ছে। পুরোপুরি নবায়ন করা হচ্ছে মাধ্যমিক শিক্ষাক্রম।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিষয়ভিত্তিক শিক্ষাক্রম প্রণয়নে সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (সেসিপ) কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে সরকার। শিক্ষাক্রম প্রণয়নে এসব কর্মকর্তাদের রাখা হয়নি। বাদ দেওয়া হয়েছে কারিকুলাম ডেভেলপমেন্ট উইং। অপরদিকে অখ্যাত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকও রাখা হয়েছে শিক্ষাক্রম প্রণয়নে। মাধ্যমিকের শিক্ষাক্রমে ইংরেজি মাধ্যমে লেখাপড়া করা শিক্ষকও রাখা হয়েছে। বাছাই করা হয়েছে পছন্দের লোক। এসব পরিস্থিতিতে ২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির প্রধান চালিকা শক্তি শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান নিজে থেকে শিক্ষাক্রম প্রণয়নের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন।
অভিযোগ উঠছে, মাধ্যমিক শিক্ষাক্রমের যারা দায়িত্বে রয়েছেন তাদের ‘যোগ্যতা বা অভিজ্ঞতাভিত্তিক’ শিক্ষাক্রম প্রণয়নের অভিজ্ঞতা নেই। প্রেসক্রিপশন যারা দিচ্ছেন তারাও শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ নন। নতুন রূপরেখা অনুযায়ী বাংলাদেশে শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব সে বিষয়ে গবেষণা নেই সংশ্লিষ্টদের। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, ‘আমরা প্রথম করছি। তাতে অসুবিধা কী? কারিকুলাম বাস্তবায়নে সমস্যা হয় কিনা সেটা দেখার জন্যই পাইলটিং করছি।’ শিক্ষার্থীরা কত শতাংশ বাস্তব অভিজ্ঞতা ও কত শতাংশ পাঠ্যবই থেকে শিখবে সেটাও নির্ধারণ করা নেই। পারদর্শিতা মূল্যায়নে সুনির্দিষ্ট গাইডলাইনও নেই। শিখনফল বাদ দিয়ে শুধু অভিজ্ঞতা দিয়ে মূল্যায়ন করা সম্ভব নয় বলে বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন।