বাল্য বিয়ের অভিশাপ
বাল্য বিয়ের অভিশাপ
হোসনেয়ারা বেগম
ফুলজান রোজ স্কুলে যায়
স্কুল তার ভালো লাগার জায়গা,
পড়াশুনায় সে গভীর মনোযোগী
স্যারেরাও তার খুব সহযোগী।
ক্লাসে প্রথম হয় ফুলজান
এবার সে পাঁচ ক্লাস পাশ দেবে
পরীক্ষার বেশি দরি নাই
স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা রেহেনা বেগম
আর অন্য স্যার আপারা বলাবলি করে
ফুলজান এ স্কুলের রাখবে মান ।
ফুলজান আরো বেশি চেষ্টা করছে
সমস্যা রাতের পড়া নিয়ে,
ওর ঘরে বিদ্যুৎ নাই
কেরোসিনের কুপির আলোয় কতক্ষণ পড়লে
বাবায় কয় মারে এতো কেরোসিন কেনার
পয়সা মোর কই
ফুলজানের চোখ ভিজে আসে সে বুঝে সবই।
পরের খেতে কামালা দিয়া বাজান
কয় টাহা আর পায়,
চারজনের সংসারে ভাত জোটানই দায়।
চেয়ারম্যান বাড়ি ফকফকা লাইটের আলো
যদি একটু পড়তে দিত।
চেয়ারম্যানের বউরে কইলে,
তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে সে।
সেয়ানা ডাঙ্গর মাইয়া
হারা রাইত ঘরে রাহুম হেইডা কেমন কথা
গরীব ঘরের মাইয়ার এতো লেহাপড়ার
দরকার কি হেতা।
এদিকে গ্রামের রহমত ঘটক বাড়িতে
আইসা কয় আরে ও ফুলজানের বাপ,
মাইয়া তোমার ডাঙ্গর অইছে দিবা নাহি বিয়া
না লেহা পড়া হরাইয়া জজ ব্যারেস্টার বানাইবা।
চাও তো ভালো একখান সমন্ধ আছে মোর কাছে
বর ঘর সবই ভালো কোন দেওন থোওন নাই
আরও তুমি কিছু পাইবা ভাগ্য খুইল্লা যাই।
শুধু আগের একখান বিয়া আছে মেন্বরের
আরে হেতে কি মিঞা ?
আউস কইরা তোমার মাইয়া করতে চায় বিয়া।
মেম্বার মোর মাইয়া নেবে হেইডা মোর ভাগ্য
মোরা গরীব মানুষ হের কি মোরা যোগ্য ?
মাইয়া মোর খাইয়া লইয়া থাকবে ভালো
তুমি দিন তারিখ ঠিক হরো।
রহমত ঘটক পান চিবায় আর কয়
মাইয়া তোমার লেহাপড়া জানা
দেইখ্য আবার কোনো গণ্ডগোল বাজায় নি
রাজি হইবো না মানি কাইটা নদীতে দিমু ভাসাই।
এদিকে পরিক্ষা শুরু হইছে হলে
সবাই আছে ফুলজান শুধু নাই
প্রধান শিক্ষিকা রেহেনা বেগমের
দুশ্চিন্তা , ফুলজান কই?
খোজ নিতে গিয়া অবাক সবাই।
বারো-তেরো বছরের ফুলজান লাল শাড়ী পরে
চল্লিশোর্ধ মেম্বারের দ্বিতীয় বউ হয়ে চলছে শশুর বাড়ি।
হয় তো তার বোধগাম্য হয় নাই
বিয়ে কি জিনিস।
এভাবেই এ সমাজ সংসার থেকে আজও
হাজার ও মেধাবী ফুলজানরা ঝড়ে প্রতিদিন
এই হচ্ছে সমাজের অবক্ষয়ের ফল
দরকার সুস্পষ্ট প্রতিকার।